করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে মালদার বাঙ্গিটোলায় অনাড়ম্বরভাবে মুক্তকেশীর পুজো হল মন্দিরের দরজা বন্ধ করে

5th April 2020 মালদা
করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে মালদার বাঙ্গিটোলায় অনাড়ম্বরভাবে মুক্তকেশীর পুজো হল মন্দিরের দরজা বন্ধ করে


দেবাশীষ পাল ( মালদা ) :  মন্দিরের দরজা বন্ধ করে ভক্তদের অনুপস্থিতিতেই অনাড়ম্বরভাবেই  সম্পন্ন হল ৪০০ বছরের ঐতিহ্যশালী বাঙ্গীটোলার  মুক্তকেশী পুজো । এলাকা থেকে করণা ভাইরাস দূর করতে সমস্ত আচার ও  আয়োজন বন্ধ রেখে কেবলমাত্র মন্ত্র পাঠের মাধ্যমে  মুক্তকেশী পূজা সম্পন্ন করছে গ্রামবাসীরা। এদিন সীমিত সংখ্যক ভক্তরা মায়ের মন্দিরের প্রসাদ দেওয়ার  সুযোগ  পেয়েছিল।  ভক্ত ও গ্রামবাসীরা হাত সানিটাইজেশন করে নির্দিষ্ট দূরত্বে  মন্দিরে প্রবেশ করতে পেরেছে। গ্রামবাসীরা দূর থেকে ভলান্টিয়ার মারফত মন্দিরের প্রসাদ দিচ্ছিল। কোন গ্রামবাসীরা ভক্তবৃন্দকে মন্দিরের ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। শুধু পুরহিত কমিটির কয়েকজন ব্যক্তি মন্দিরের ভিতরে থাকলেও মন্দিরের বাইরে পূজা কমিটির সদস্যরা মোতায়েন ছিল। যেন ভক্তদের ভিড় না হয় তার জন্য তৎপর ছিল কমিটির সদস্যরা। পূজা কমিটি এই পুজো সরাসরি ফেসবুক লাইভ করায় অনেকে বাড়িতে বসে পুজো দেখতে পাই । 

কালিয়াচক ২ নম্বর ব্লকের ভাঙ্গন এলাকার সবচেয়ে প্রাচীন ও জাগ্রত  বাঙ্গীটোলা গ্রামের মা মুক্তকেশী পুজো।  ৪ এপ্রিল থেকে ৯ এপ্রিল পাঁচ দিনব্যাপী বিভিন্ন সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মহাযজ্ঞ অন্নকূট ও দুস্থদের বস্ত্র বিতরণ এর মাধ্যমে এই পুজো করার সিদ্ধান্ত নেয়। কলকাতা থেকে বিভিন্ন নামী দামী শিল্পী ও বুকিং হয়ে যায় পূজা কমিটির।  কিন্তু করণাতঙ্কে সরকার  লক  ডাউনের  সিদ্ধান্ত নেওয়ায়  গ্রামবাসীরা শুধুমাত্র পূজা করা র  সিদ্ধান্ত নেয়। বাতিল করা যায় বিভিন্ন  যজ্ঞ অনুষ্ঠান, অন্নকূট, বস্ত্র বিতরণ, সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ফলে শোকের ছায়া নেমে আসে মুক্তকেশী ভক্তবৃন্দের  মধ্যে।  

আনুমানিক  ৪০০  বছর  পুরাতন  এই  পৃজা ঘিরে  স্থানীয় মানুষের  শ্রদ্ধা ভক্তি দিন  দিন বেড়ে চলেছে ।প্রতি বছর  চৈত্র মাসে শনিবারে পূজা হয়। পূজার দিন স্থানীয় ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার মানুষের ভিড় দেখা যায় মন্দির প্রাঙ্গণে । কর্মসূত্রে গ্রামের বাইরে থাকা প্রত্যেক মানুষ শত অসুবিধা থাকা সত্বেও গ্রামে উপস্থিত থাকে। প্রতিবছর মুক্তকেশী মন্দির  ব্যাপক  জনসমাগম  লক্ষ্য করা যায়।

পূজা সৃষ্টির ইতিহাস নিয়ে গ্রামবাসীদের প্রচলিত ধারণা আজ থেকে ৪০০ বছর আগে এই গ্রামের এক যোগী পুরুষ রামদেব বিদ্যানিধি চক্রবর্তীকে তন্ত্র সাধনা করেছিল এক বৃদ্ধা রমণী। সেই বৃদ্ধার অনুপ্রেরণায় ঘন জঙ্গলে বিরাট  বটবৃক্ষের পাদদেশে পঞ্চমুন্ডির আসন পঞ্চ তন্ত্র সাধনায় সিদ্ধিলাভ করেন। তিনি সিদ্ধি লাভের পর যোগী বিদ্যানিধি চক্রবর্তী মা মুক্তকেশী সাক্ষাৎ দর্শন লাভ করেন। বলা বাহুল্য বিদ্যানিধির পূর্বদৃষ্ট সেই বৃদ্ধা ছিলেন সর্ব কল্যাণময়ী মা মুক্তকেশী পরম ও জাগ্রত ।এই মুক্তকেশী কে স্থানীয় মানুষ গ্রাম- কল্যাণী রূপে অর্চনা করেন । স্থানীয় মানুষের দাবি এলাকার বিভিন্ন মহামারী ও বিপদ থেকে রক্ষা করেন এই গ্রাম ও কল্যাণ এই গ্রামের প্রতিটি মানুষ গঙ্গার ভাঙনের হাত থেকে একমাত্র মা মুক্তকেশী গ্রাম কে রক্ষা করেছে। ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে এলাকায় একবার কলেরা মহামারী ধারণ করলেও এই গ্রামে তাছাড়া ছড়ায়নি। গ্রামবাসীদের বিশ্বাস তখনো তাদের মা মুক্তকেশী রক্ষা করেছিল। এছাড়া ১৯৯০ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত গঙ্গার প্রলয়ঙ্করী ভাঙ্গনে এই ব্লকের বহু গ্রাম গঙ্গা গরমে বিলীন হয়ে গেলেও গঙ্গা এই গ্রামের পাদদেশে উপস্থিত হয়ে  তার পথ পরিবর্তন করেছে। ফলে এই মুক্তকেশী কে ঘিরে স্থানীয় মানুষের বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা একটা অন্য মাত্রা পেয়েছে। আজো এই এই শতাব্দীর সবচেয়ে বড় মহামারীতে এলাকাবাসীদের এই মুক্তকেশী রক্ষা করবে বলে প্রত্যেক গ্রামবাসীর বিশ্বাস।  এবছর সারারাত ধরে মায়ের পুজো করেন করবেন স্থানীয় দুই পুরোহিত  জয়ন্ত চক্রবর্তী ও শিবাই ঝা। পূজা কমিটির  সভাপতি অচিন্ত মিশ্র জানান  ৪০০ বছরের  ঐতিহ্য শালী ও পুরাতন এই পূজা ভাঙ্গন এলাকার সবচেয়ে বড় পুজো গঙ্গার ভাঙ্গন সহ অতীতের বিভিন্ন মহামারী ও বিপদের সময় এক গ্রাম তথা এলাকাকে রক্ষা করেছেন মা মুক্তকেশী। শতাধিক বছর আগে এই এলাকায় কলেরা মহামারী আকার ধারণ করে। আশেপাশের সব গ্রামে কলেরা হলেও বাংলা গ্রামে তা প্রবেশ করতে পারেনি এছাড়াও গঙ্গার ভাঙ্গনে এই ব্লকের একটার পর এক গ্রাম গঙ্গা করবে চলে গেলেও বাঙ্গীটোলা গ্রামের পাদদেশে  এসেই গঙ্গা তার পথ পরিবর্তন করেছে।
সম্প্রতি গঙ্গার ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে প্রায় ১০ লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে এই মুক্তকেশী মন্দির তৈরি হয়েছে। এ  বছর আমরা সমস্ত আচার ও অনুষ্ঠান বন্ধ রেখে শুধুমাত্র করণা ভাইরাসকে দূর করার আবেদন নিয়ে শুধুমাত্র  এই পূজারী আয়োজন করে করা হয়েছে।





Others News